আরও দেখুন
দুই সপ্তাহের মধ্যে, ফরেক্স মার্কেটে ক্রিসমাস এবং নববর্ষের ছুটি শুরু হবে, যা জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তবে ছুটিতে যাওয়ার আগে, ট্রেডাররা ডিসেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলোর প্রতি প্রবল প্রতিক্রিয়া জানাবে।
আসন্ন সপ্তাহে EUR/USD পেয়ারের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ECB) বছরের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার, ট্রেডারদের দৃষ্টি চীনের নভেম্বরের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনের দিকে নিবদ্ধ থাকবে। অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে তেমন কোন ইভেন্ট না থাকায়, যদি এই প্রতিবেদনটির ফলাফল পূর্বাভাসের তুলনায় ভিন্ন হয় তবে এটি মার্কিন ডলারের পেয়ারগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
অক্টোবরে চীনের ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) 0.3%-এ নেমে গিয়েছিল (পূর্বাভাস ছিল 0.4%)। এই সূচকটি টানা দ্বিতীয় মাসের জন্য নিম্নমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে, যা দুর্বল ভোক্তা চাহিদার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। নভেম্বরের দেশটির ভোক্তা মূল্য সূচক বা CPI 0.4%-এ পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, দেশটির মুদ্রাস্ফীতি যদি অপ্রত্যাশিতভাবে আরও মন্থর হয়, তাহলে ঝুঁকি গ্রহণ না করার প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে পরোক্ষভাবে মার্কিন ডলারের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরবর্তীতে মার্কিন সেশনের সময় পাইকারি পণ্য মজুতের তথ্য প্রকাশিত হবে, তবে এটি একটি গৌণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক, যা EUR/USD পেয়ারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না।
মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম ব্যয় সূচক প্রকাশিত হবে, যা প্রত্যেক কর্মীর জন্য নিয়োগকর্তার মোট ব্যয়ের বার্ষিক পরিবর্তন পরিমাপ করে (এর মধ্যে শুধু বেতন কর্তন নয়, বরং কর এবং অন্যান্য তহবিলে প্রদেয় অর্থও অন্তর্ভুক্ত)। এই সূচকটি কেবল তখনই মার্কিন ডলারের ওপর প্রভাব ফেলবে যদি এটির ফলাফল পূর্বাভাস থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন হয়। তৃতীয় প্রান্তিকে সূচকটি 1.3%-এ নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে 1.9% এবং প্রথম প্রান্তিকে 2.4% ছিল।
বুধবার সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন নভেম্বরের মার্কিন ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) প্রকাশিত হবে। ফেডারেল রিজার্ভের সাম্প্রতিক বিবৃতি অনুসারে, এই প্রতিবেদনের ফেডের জানুয়ারির বৈঠকের এবং সম্ভাব্যভাবে ডিসেম্বরের বৈঠকের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ফেডের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার মুদ্রাস্ফীতি কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পেলে আর্থিক নীতিমালার নমনীয়করণ স্থগিত করার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। অর্থাৎ, যদি CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক এবং PPI বা উৎপাদক মূল্য সূচক আবার বৃদ্ধি পায় তাহলে সুদের হার নাও কমানো হতে পারে। একই সময়ে, ওয়ালার কেবল তাত্ত্বিকভাবে নয়, ডিসেম্বরের বৈঠক প্রসঙ্গে আর্থিক নীতিমালার নমনীয়করণ স্থগিত করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
তদ্রূপ, সান ফ্রান্সিসকো ফেডের প্রেসিডেন্ট মেরি ডালি মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেলে সুদের হার বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন। ফেডের বেশিরভাগ সদস্য আর্থিক নীতিমালা নমনীয়করণের গতি কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তবে "বিকল্প পরিস্থিতির" সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেননি। এর মধ্যে রয়েছেন জেরোম পাওয়েল, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে তার বক্তব্যে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অর্থাৎ, বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন ভোক্তা মূল্য সূচক বা CPI খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, মার্কিন হেডলাইন CPI বার্ষিক ভিত্তিতে 2.7%-এ (অক্টোবরে এই সূচক 2.6% ছিল) বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে, এটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিলক্ষিত ছয় মাসের নিম্নমুখী প্রবণতার বিপরীতে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। অক্টোবরে হেডলাইন CPI প্রত্যাশার বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং নভেম্বরেও এটি পূর্বাভাস অনুযায়ী (অথবা "ঊর্ধ্বমুখী") আসলে, যেকোন নির্দিষ্ট প্রবণতার কথা বলা যেতে পারে, কারণ ফেডের প্রতিনিধিরা মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেলে উদ্বিগ্ন হবে।
কোর CPI বার্ষিক ভিত্তিতে 3.3%-এ থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অক্টোবরে এবং সেপ্টেম্বরে এই সূচক একই স্তরে ছিল। কোর CPI স্থিতিশীল থাকলেও সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধি ফেডের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
বৃহস্পতিবার EUR/USD এর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, কারণ ইউরোপীয় সেশনে ইসিবির এ বছরের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যাশা অনুসারে, ইউরোজোনের সুদের হার 25 বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, ইসিবির সুদের হার এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের প্রান্তিক ভিত্তিক পূর্বাভাসও প্রকাশিত হবে। সাম্প্রতিক ইউরোপীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতির তথ্যের ভিত্তিতে, সুদের হার 50 বেসিস পয়েন্ট কমানোর বিষয়টি তাত্ত্বিকভাবেও বিবেচিত হচ্ছে না। সুতরাং, সুদের হার 25 পয়েন্ট কমানো হলে সেটি ইউরো এবং EUR/USD পেয়ারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না। ট্রেডাররা আর্থিক নীতিমালার ভবিষ্যৎ নমনীয়করণের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। তাই মার্কেটের ট্রেডারদের মূল মনোযোগ ইসিবির আনুষঙ্গিক বিবৃতির মূল বিষয় এবং ক্রিস্টিন লাগার্ডের বক্তব্যের দিকে থাকবে।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইউরোজোনের তৃতীয় প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি 0.4% (পূর্বাভাস ছিল 0.2%) বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের শুরু থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। বার্ষিক ভিত্তিতে, জিডিপি 0.9% (পূর্বাভাস: 0.8%) বৃদ্ধি পেয়েছে, যা 2023 সালের প্রথম প্রান্তিকের পর থেকে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।
মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে, হেডলাইন CPI বার্ষিক ভিত্তিতে 2.0% (পূর্বাভাস: 1.9%) এ পৌঁছেছে এবং কোর CPI আগের মাসের স্তর 2.7%-এ স্থিতিশীল রয়েছে (পূর্বাভাস ছিল 2.6% হ্রাস)। পরিষেবা খাতের মূল্যস্ফীতি (যা ইসিবি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে) 3.9% এর উচ্চ স্তরে রয়ে গেছে।
এই ধরনের ফলাফল এটি নির্দেশ করে যে ইসিবি মাঝারি মাত্রায় আর্থিক নীতিমালার নমনীয়করণ চালিয়ে যেতে পারে। বৈঠক শেষ হওয়ার পর বিবৃতিতে লাগার্ড প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে নীতিমালা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা উল্লেখ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন সেশনে উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI) প্রকাশিত হবে, যা CPI এর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাস্ফীতি নির্দেশক। পূর্বাভাস অনুযায়ী, হেডলাইন PPI বার্ষিক ভিত্তিতে 2.5% এবং কোর PPI 3.2% বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। PPI বা উৎপাদন মূল্য সূচকের শক্তিশালী ফলাফল মার্কিন ডলারকে সমর্থন যোগাতে পারে, বিশেষ করে যদি CPI পূর্বাভাস অনুযায়ী আসে বা প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যায় (অথবা "ঊর্ধ্বমুখী" থাকে)।
শুক্রবার ইউরোজোনের শিল্প উৎপাদন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। মাসিক ভিত্তিতে, সূচকটি ইতিবাচক গতিশীলতা দেখাতে পারে, তবে এটি এখনও নেতিবাচক অঞ্চলে থাকবে (অক্টোবরে -0.1% ছিল এবং সেপ্টেম্বরে -2.0% ছিল)। বার্ষিক ভিত্তিতে, সূচকটি -2.8% থেকে কমে -3.0% এ পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
মার্কিন সেশনে আমদানি মূল্য সূচক (Import Prices Index) প্রকাশিত হবে। এটি গুরুত্বের দিক থেকে গৌণ সূচক হলেও এটি মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সূচকটি নভেম্বর মাসে বার্ষিক ভিত্তিতে 1.0% এ পৌঁছাতে পারে (অক্টোবরের 0.8% ছিল এবং সেপ্টেম্বরে -0.1% ছিল)।
এ সপ্তাহে মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন (CPI এবং PPI) এবং ইসিবির বৈঠক ট্রেডারদের প্রধান মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেলে সেটি ডলারের চাহিদা বাড়াবে, কারণ এই পরিস্থিতিতে ট্রেডাররা মেরি ডালির বক্তব্যে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত, নন-ফার্ম পেরোলের শক্তিশালী ফলাফল এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য মুদ্রাস্ফীতিনির্ভর নীতিমালার কথা পুনরায় বিবেচনা করবেন।
এদিকে, ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির পরও ইসিবির নমনীয় নীতি ইউরোর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
যদি এই পেয়ারের মূল্য 1.0530 এর সাপোর্ট লেভেলে ব্রেক করে ফেলে (D1-এ বলিংগার ব্যান্ডের মধ্যম এবং টেনকান-সেন লাইন) তাহলে EUR/USD-এর শর্ট পজিশন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে এই পেয়ারের মূল্যের প্রথম লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.0470 (বলিংগার ব্যান্ডের নিম্ন লাইন, যা H4-এ কুমো ক্লাউডের নিম্ন সীমানার সাথে মিলে যায়), এবং দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.0420 এর লেভেল (D1-এ বলিংগার ব্যান্ডের নিম্ন লাইন)।